নাটোরে পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলির নির্দেশে করোনা ভীতি উপেক্ষা করে বেওয়ারিশ এক পাগলের দাফন কাফনের ব্যবস্থা করলেন ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরহাদ হোসেন।
মঙ্গলবার বিকেলে শহরের বড়গাছা এলাকার নাহার ক্লিনিকের সামনে অঞ্জাতনামা এক মুসলমান পাগলের মৃতদেহ পরে থাকতে দেখা যায়। লাশটি দেখার জন্য কৌতুহলি মানুষের ভীড় বাড়তে থাকে। ইতিমধ্যে বেওয়ারিশ মুসলমানের লাশটি দীর্ঘক্ষণ ধরে ফুটপথে পরে থাকার খবরটি নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি কানে যায়।
তিনি তাৎক্ষণিক পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরহাদ হোসেন কে লাশটি দাফন কাফনের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন। মেয়রের নির্দেশ পাওয়ামাত্র কাউন্সিলর ফরহাদ লাশটি ভ্যানে করে শহরের গাড়ি খানা গোরস্থানে নিয়ে যান। সেখানে কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবককে সাথে নিয়ে তিনি নিজ হাতে মৃতদেহটির গোসল করান। জানাযা শেষে কবর দেন।
পৌর মেয়র উমা চৌধুরী জলি বেওয়ারিশ লাশের কবর দিয়ে আসছেন নিজ উদ্যোগে। অনেক মানুষ মারা যায় বিভিন্ন কারণে, যাদের মধ্যে অনেক লাশ নিতে কেউ আসে না।
সড়কে কিংবা রেল দুর্ঘটনা, তীর্থযাত্রী, অভিবাসী অথবা এমন অনেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা রয়েছেন যাদের সন্তানরা ত্যাগ করেছে; এসব ব্যক্তির লাশের জায়গা হয় পৌর মেয়র উমা চৌধুরী এবং কাউন্সিলর ফরহাদ হোসেনের কাছে খবর দিলেই।
করোনার ভাইরাসের শুরু থেকে তিনজন বেওয়ারিশের লাশ তিনি দাফন কাফনের ব্যবস্থা করেন।
করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরুতে নাটোর ষ্টেশনে এক মুসলিম পাগল মারা যায়। করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হতে পারে এ আশঙ্কায় সবাই দায়িত্ব এড়িয়ে যায় ।ঠিক তখন ভীতি উপেক্ষা করে পাগলের সৎকার করেন মেয়র এবং কাউন্সিলর।
মৃত ব্যক্তি মুসলমান হলেও পৌরমেয়র নিজে লাশটি গাড়িখানা গোরস্থানে নিয়ে যায় এবং দাফন কাফনের ব্যবস্থা করেন।
নাটোর জেলা পৌর সার্ভিস অ্যাসোসিয়শনের সভাপতি জুলফিকুল হায়দার বাবু জানান, পৌর মেয়র উমা চৌধুরী এবং কাউন্সিলর ফরহাদ হোসেন করোনা ভীতি উপেক্ষা করে বেওয়ারিশ লাশের দাফন এবং সৎকারের ব্যবস্থা করছেন। যা সত্যিই প্রশাংসার দাবি রাখে।
গাড়িখানা এলাকার কামরুল হাসান জানান, বেওয়ারিশ লাশ মুসলিম সম্প্রদায়ের হলে মুসলিম রীতিতে ও হিন্দু সম্প্রদায়ের হলে পোড়ানোর ব্যবস্থা করেন মেয়র।
মৃত ব্যক্তি মুসলমান হলেও তিনি ধর্ম বর্ণের ভেদাভেদ ভুলে পৌর মেয়র নিজে লাশ গোরস্থানে নিয়ে যায় এবং কাউন্সিলর ফরহাদ হোসেন দাফন কাফনের ব্যবস্থা করেন।
কাউন্সিলর ফরহাদ জানান, এটা আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা। করোনার আক্রান্ত বা উপসর্গে কোনো ব্যক্তি মারা গেলে আমাদের জানাবেন। আমি আমার স্বেচ্ছাসেবক দের নিয়ে সৎকারের ব্যবস্থা করব।
পৌর মেয়র উমা চৌধুরী জলি বলেন, আমিই হব বেওয়ারিশ লাশের অভিভাবক। আমি বেওয়ারিশ লাশের সৎকার করব। দরিদ্র বা ভাসমান কোনো মানুষ মারা গেলে একজন মানুষ হিসেবে তাকে দাফন কাফন করা হচ্ছে সামাজিক দায়বদ্ধতা।
যে ব্যক্তিটি মারা গেছে সেও তো মানুষ। কোনো বাবা মায়ের সন্তান। তাই কোনো বেওয়ারিশ লাশ মারা গেলে আমাকে জানাবেন।