রাষ্ট্রবিরোধী ও  উসকানিমূলক কথাবার্তা এবং রাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে কটাক্ষ করার অভিযোগে ‍‘শিশুবক্তা’ হিসেবে পরিচিত রফিকুল ইসলাম মাদানীকে গ্রেফতারের পর ডিজিটাইল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জেলহাজতে প্রেরণ করেছে আদালত। অন্যদিকে সম্প্রতি দেশজুড়ে নাশকতা ও প্রাণহানির অভিযোগে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ শীর্ষ ৩০ নেতাকে নজরদারিতে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে তিনটি মামলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

এদিকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয় রিসোর্টে মামুনুল হক এক নারীসহ অবরুদ্ধ হওয়ার বিতর্কিত ঘটনায় কোণঠাসা হয়ে কৌশলী ভূমিকা নিয়েছে হেফাজত। সংগঠনটির নেতারা গ্রেপ্তার এড়াতে সংঘাত হতে পারে, এমন কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ কারণে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে গতকাল বৃহস্পতিবার যে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছিল, তা স্থগিত করেছে সংগঠনটি।

হেফাজতের বিষয়ে পুলিশ ও র‌্যাবের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মামুনুল হকসহ হেফাজতের কেন্দ্রীয়, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ঢাকার কয়েকজন নেতা নজরদারির মধ্যে আছেন। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি অন্তত ৯৮টি মামলার তদন্তে জড়িতদের শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। সম্প্রতি সারাদেশে তাণ্ডবকারীদের সাথে নাশকতাকারী ও নাশকতার নির্দেশদাতাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছেন। তদন্তে তাদের সংশ্লিষ্টতা পেলেই গ্রেফতার করা হবে।

ইতোমধ্যে মামুনুল হকসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্টন থানায় হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়েছে। মামলায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে নাশকতার হুকুমদাতা, বিস্ফোরণের হুকুমদাতা এবং নিরীহ মানুষকে হত্যাচেষ্টার হুকুমদাতা বলা হয়েছে।

দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, গত মার্চে ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সারাদেশে তাণ্ডবের পর থেকেই হেফাজত নেতা মামুনুল হকসহ শীর্ষ নেতাদের নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। তাদের গ্রেফতারের বিষয়টি এরই মধ্যে পুলিশ সদর দফতরে আলোচনা হয়েছে। মামলার তদন্তে তাদের সংশ্লিষ্টতা পেলে গ্রেফতার করা হবে।

মামুনুল ছাড়াও হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা নুরুল ইসলাম জেহাদী, মুফতি মনির হোসাইন কাশেমী, মাওলানা যাকারিয়া নোমান ফয়েজী, মাওলানা ফয়সাল আহমেদ, মাওলানা মুশতাকুন্নবী, মাওলানা হাফেজ মো. জোবায়ের, মাজেদুর রহমান, মাওলানা হাবিবুর রহমান, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়্যুবী, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা লোকমান হাবিব,  নাসির উদ্দিন মনির, মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, মাওলানা জসিম উদ্দিন, মাওলানা মাসুদুল করিম, মাওলানা হাফেজ মো. তৈয়বসহ ৩০ জন নজরদারিতে রয়েছেন।

বুধবার (৭ এপ্রিল) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বৈঠকে তাদের গ্রেফতার করার বিষয়টি আলোচনা করা হয়। শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতারের পর ঢাকা শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন হতে পারে এনিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা আলোচনা করেছেন।

এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হেফাজতের তাণ্ডবের পর থেকেই সারা দেশের দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি  নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সিলেট ও নারায়ণগঞ্জের সব থানা ও পুলিশ ফাঁড়িতে বিশেষ নিরাপত্তায় এলএমজি চৌকি স্থাপন করা হয়েছে বুধবার (৭ এপ্রিল) রাত থেকে। এসব চৌকিতে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ।

সিলেট মহানগরে বিশেষ নিরাপত্তা বিষয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ জানান, এসএমপির সকল থানা, ফাঁড়ি ও স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রতিটি স্থাপনায় এলএমজি পোস্ট বসানো হয়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকে এই পোস্টগুলো বসানোর কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যে সকল স্থাপনায় এলএমজি পোস্ট বসানোর কাজ শেষ হয়েছে।

একই অবস্থা সিলেট জেলার ১১ থানাতেও। এসব থানায় এলএমজি পোস্ট বসানোর কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন।

ইতোমধ্যেই সব থানায় এলএমজি সরবরাহ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ছাড়া ঝুঁকির মাত্রা বিবেচনায় প্রতিটি থানায় অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। কোনো দুষ্কৃতকারী কোনো ধরনের হামলা চালানোর চেষ্টা করে আর পার পাবে না।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম জানান, পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনায় দেশব্যাপী ও জেলার ৭টি থানা ও ৮টি ফাঁড়িতে ওই বিশেষ চৌকি স্থাপন করা হয়েছে। বাড়তি নিরাপত্তার অংশ হিসেবে পুলিশের আওতাধীন সব থানা, ফাঁড়ি, তদন্তকেন্দ্র ও স্থাপনাগুলোতে এলএমজি পোস্ট স্থাপন করা হয়েছে।